৩২ বছর পরে মুক্তি পেলেন জল্লাদ শাহজাহান

৩২ বছর পরে মুক্তি পেলেন জল্লাদ শাহজাহান

যত অপরাধই করুক না কেন কাউকে মৃত্যুর মুখে দেখলে মায়া হয় জল্লাদ শাহজাহান দীর্ঘদিন জেল খেটেছি। জেলে সার্ভিস দিয়েছি। কারাগারে ছিলাম। আমাকে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট আদর করেছে এবং সম্মান করেছে আমি ভালোই ছিলাম। প্রায় ৩২ বছর কারাভোগের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া। এবং কারাগারের প্রধান জল্লাদ হিসেবে ৩ দশকে একে একে ২৬ জন অপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করেছেন জল্লাদ শাহজাহান ।


এই তালিকায় আছেন সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী বঙ্গবন্ধুর খুনি বজলুল হুদা ও শাহরিয়ার রশিদের নাম সাকা চৌধুরী, এরশাদ শিকদার ও বাংলা ভাইয়ের মতো অপরাধীরা কে ফাসি দেন। আজ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর ফাঁসি কার্যকর শাহজাহানের নিজের মানসিক অবস্থার জানতে চেয়েছিলেন গণমাধ্যমকর্মীরা। জবাবে তিনি বলেন মৃত্যুর আগে মানুষগুলোর জন্য মায়া লাগলেও আইনের খাতিরেই কাজটি করতে হয়েছে।

শাহজাহান বলেন 'দীর্ঘদিন জেল খেটেছি সার্ভিস দিয়েছি কারাগারে ছিলাম আমাকে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সম্মান করেছে আমি ভালোই ছিলাম ফটক থেকে বের হয়ে আসার সময় তার পরনে ছিল সাদা পোশাক, হাতে একটি ব্যাগ। শাহজাহান গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে বক্তব্যে উঠে আসে গত ৩২ বছরে বাংলাদেশের ইতিহাসের কিছু আলোচিত অপরাধীদের নাম। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জল্লাদ হিসেবে ৩ দশকেরও বেশ সময়ে ছিলেন । যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত ব্যক্তি, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি এবং এরশাদ শিকদার ও মুনীরের (মুনীর-খুকু হত্যা মামলার আসামি) অনেক বড় বড় অপরাধীকে ফাঁসি দেন তিনি।

যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেওয়া নিয়ে অনুভূতি কথা  বলেন যুদ্ধের অংশের সঙ্গে থাকতে পেরে তিনি সন্তুষ্ট যখন তিনি কারাগারের বাইরে ছিলেন, তখন স্বাধীনতা সংগ্রাম নিজের চোখে দেখেছেন বলে। যদি তারা সে অপরাধ করে আছে আমি তো আর তাদের মনের খবর বলতে পারব না, এবং যেহেতু তারা দোষী হয়েছে, অপরাধ করেছে, সে হিসাবে তো আমার খারাপ লাগ্লে কাজ করতে হয় । শাহজাহান বলেন আমার অতীত টা ভালো ছিল না। আমি অপরাধ করেছি, জেল খেটেছি সাস্তি পেয়েছি ।

তিনি আরও  বলেন আমি অন্যের বাড়িতে উঠছি এখন তাহলে আমি কী করে খাব  কোথায় যাব কী করব  এখন তো আর আমার সেই বয়স নেই  কাজ করে খাবার  আমার বয়স ৭৪। আমি এখন কী করব? আমার একটাই কথা আপনাদের কাছে, আপনারা যদি  আমাকে একটু সাহায্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার একটাই অনুরোধ। আমাকে যেন একটি বাড়ি-ঘর দিয়ে, আমাকে চলার মতো কিছু করে দেন। এটাই আমার অনুরোধ। তিনি আরও বলেন আমি জানি আমার একটা বোন আছে, ভাগিনা আছে কিন্তু জেলে আসার পর থেকে তাদের সঙ্গে আমার কখনো যোগাযোগ নেই নাই । ফোনে ২-১ বার কথা হয়েছে কিন্তু আসেনি বোনের সঙ্গে আমার কখনো (কারাদণ্ডের পর) দেখাও করেনি তিনি বলেন।

শাহজাহান আরও বলেন যারা আমার সঙ্গে মুক্তি পেয়েছে, আমি তাদের সঙ্গে কারাগারে  ভালো ব্যবহার করেছি, তারাও আমার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেছে। এবং তাদের সঙ্গেই এখন যাচ্ছি, যেতে বাধ্য হচ্ছি। কারন কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন কি না জানতে চাইলে  শাহজাহান বলেন গণমাধ্যমকর্মীদের এখানে নিরাপত্তার বিষয়টা ভিন্ন আমার হুকুমে তো ফাঁসি হয়নি  রাষ্ট্রের দায়িত্বে আছে, তাদের হুকুমে ফাঁসি দিয়েছি।  আসামিরা প্রেসিডেন্টের ক্ষমা ভিক্ষা করেও ব্যর্থ হওয়ার পরেই  এসেছে আমার কাছে।

অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে শাহজাহান তিনি বলেন, প্রতিটি ফাঁসিতেই কিছু আবেগ জড়িত  কারণ  আছে আমার হাত দিয়ে একটা লোক যাচ্ছে। একটা মানুষ যত অপরাধই করুক, তাকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে দেখলে সবারই অনেক মায়া লাগে। কিন্তু আমি মায়া করলেও তো লাভ নাই আদালত বা আইন তো মায়া করবে না। আমি চলে আসার পরও অপরাধীদের ফাঁসি হবে। শাহজাহান বলেন  আমি নিজে কনভিক্টেড, সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলাম দেখেই আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এবং বড় বড় অপরাধীদের ফাঁসি দেওয়ার স্মৃতিচারণ করেন তিনি।

শাহজাহান জানান এরশাদ শিকদার ফাঁসির আগে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শুধু একটি কথাই বার বার বলেছিলেন আমার জীবনে আমি কখনো কোনো অপরাধ করিনি, আমার জন্য দোয়া করবেন। এবং বাংলা ভাই নামে পরিচিত জেএমবি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম অনুরোধ করেছিলেন তার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পরে যেন ছবি তোলতে না দেওয়া হয়।  আরও জানান বঙ্গবন্ধুর খুনিরা একেবারেই চুপচাপ ছিলেন কোনো কথাই বলেননি। ফাঁসি দেওয়ার আগে মুনীর বলেছিলেনএকটা সিগারেট দাও আমাকে

সরকারের কাছে কী চান এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাকে যেন প্রধানমন্ত্রী বাকি জীবন থাকা-খাওয়া ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেন এটাই  আমার একমাত্র চাওয়া।