গল্পটা গার্মেন্টস কর্মীর।
গার্মেন্ট কর্মী কথাটা শুনলেই কেমন যেন আমাদের মধ্যে থার্টক্লাস মার্কা দৃষ্টিভঙ্গি চলে আসে। সমাজের নিচু স্তরের মানুষ ভাবি। তাদের নিজেদের এ নিয়ে তেমন অভিযোগ বা অনুশোচনা ও নেই কেননা তাদের দুর্বিসহ এবং করুন জীবন-যাপনে আমাদের নিন্দুকদের কথা গুলো অতি-তুচ্ছ।প্রতিদিন,দিনের আগমনি দূত সূর্য উঠার আগেই বিছানা ছাড়তে হয় তাদের।
ক্লান্ত শরীর আরো অনেক খানি বিশ্রাম চায় কিন্তু বাস্তবতা ঠেলে দেয় কর্মযজ্ঞের পথে। একে-একে সিরিয়াল ধরে রান্না করে ছোট চুলায়। ২/৩ ফুটের কোন স্যাঁতসেঁতে গোসল খানায় ট্যাপকলের পানিতে কোন রকমে গোসল দিয়ে, দুপুরের খাবারের টিফিন ক্যারি নিয়ে ছুটে চলে কর্মযজ্ঞে। রাস্তার পাশে দাড়িয়ে থাকে প্রতিদিনের সেই বাসটির জন্য। সকাল থেকে রাত অবধি চলে কাজ। মাঝে কেবল ১, আধঘন্টা বিরতি। প্রায়দিনই জিএম, ফোরম্যানের গালিগালাজ শুনে অভ্যস্ত তারা।
থাকা-খাওয়া বাদে কোন টাকা থাকে না বললেই চলে, তা দিয়েই সান্তনা দেয় গ্রামে থাকা দরিদ্র বাবা-মা বা পরিবারকে। তারা যখন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পরে আমাদের কেবল তখন সকাল হয়। বিশাল এই স্থলভাগে তাদের জায়গাটা খুবই সংকীর্ণ। শহরের কোন বসবাস অযোগ্য জায়গায় তারা জরাজীর্ণ হয়ে বাস করে। এই গার্মেন্টস খাত থেকে আসে কোটি কোটি টাকা। দেশের অর্থনীতির প্রধান উৎস এখন গার্মেন্টস সেক্টর। কিন্তু যাদের হাতের স্পর্শে তৈরি হয় পোশাক, এর পিছনে যাদের মূল অবদান তারাই সমাজের চোখে অতিতুচ্ছ।
মালিক পক্ষ অল্প দিনেই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়। তাদের এবং তাদের পরিবারের যখন বড় ধরনের রোগ হয়, বা দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় তখন একমাত্র আল্লাহর উপর নির্ভরশীল ছাড়া কোন উপায় নেই। অথচ প্রতেকটি কর্মীর জন্যই জীবন বীমা করা থাকে। তা হয়তো তাদের কাছে অজানাই থাকে। মালিক বা সরকার পক্ষের কোন ভাবনা বা দায় নেই তাদের প্রতি।
সবাই ই দারিদ্র্যতার সুযোগ নিচ্ছে। অনেক মালিক পক্ষের কাছে তাদের জীবন জীব-জানোয়ারের চেয়েও মূল্যহীন। আল্লাহ ও বুঝি তাদের প্রতি বিরাগতা দেখায়। আমরা সাধারন মানুষ হয়তো গার্মেন্ট মালিক বা সরকার নই। কিন্তু দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখা এ সকল গার্মেন্টকর্মীদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল হতে পারি। তাদের সম্মান করতে পারি। অন্য দশজন মানুষের মত সমান চোখে দেখতে পারি।