হাঁপানি কী ,হাঁপানি কেন হয়, করণীয় কী

হাঁপানি কী ,হাঁপানি কেন হয়, করণীয় কী

‘মনে হয় মাঝরাতে ঘুসঘুসে জ্বর হয় কারো কারো/কারো কারো হাঁপানির শ্বাসকষ্ট শুনতে পাই মাঝরাতে’। হাঁপানি বস্তুত শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত একটি রোগ। এ রোগ দীর্ঘমেয়াদি। শ্বাসতন্ত্রে প্রদাহ হলে শ্বাসনালি ফুলে যায়। এরপর ধীরে ধীরে শ্বাসকষ্ট, কাশি, বুকের মধ্যে শোঁ শোঁ শব্দ, বুকে চাপ ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে থাকে। হাঁপানির কারণ সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে কতগুলো বিষয় রয়েছে, যেগুলো হাঁপানি রোগের উৎপত্তি ও স্থায়িত্বের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে থাকে।

* এ রোগ জেনেটিক বা বংশগত কারণে হতে পারে। বংশে কারও এ রোগ থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের যে কারও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

* পশুর লোম, আরশোলা, রেণু, ছত্রাক প্রভৃতি হাঁপানির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

* বায়ুদূষণ, সিগারেটের ধোঁয়া, কারখানার বিভিন্ন উত্তেজক পদার্থ, রঙের ঝাঁজালো গন্ধ, ঠান্ডা হাওয়া, ঝাঁজালো মসলা প্রভৃতির কারণে হাঁপানির আশঙ্কা বেড়ে যায়।

* বিভিন্ন ব্যথানাশক ওষুধ, অ্যাসপিরিন, হেরোইন প্রভৃতির অতি ব্যবহারের কারণে হাঁপানি হতে পারে।

* মানসিক চাপ, অতিরিক্ত আবেগপ্রবণতাও অনেক ক্ষেত্রে হাঁপানির তীব্রতা বাড়াতে পারে।

* সাধারণত শিশু বয়সে ছেলেদের এ রোগ হয় এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক হলে এ রোগ বেশি হয়।

* কারও কারও ক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের খাবার, যেমন গরুর মাংস, চিংড়ি, ইলিশ, বেগুন—এসব খেলে হাঁপানির মাত্রা বাড়তে পারে। সালবিউটামল-জাতীয় উপশমকারী ওষুধ তাৎক্ষণিকভাবে শ্বাসনালির ছিদ্রপথ প্রসারিত করে এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের বাধা কমিয়ে দেয়।

* স্টেরয়েড, অ্যামাইনোফাইলিন, ক্রোমগ্লাইকেট ইত্যাদি প্রতিরোধক ওষুধ ব্যবহার করা হয়।

* হাঁপানির চিকিৎসায় ইনহেলার সবচেয়ে উপকারী এবং আধুনিক পদ্ধতি। এতে খুব অল্প মাত্রার ওষুধ প্রয়োগ করেই ভালো ফল পাওয়া যায়। খুব একটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হয় না।

* হাঁপানির চিকিৎসায় নেবুলাইজারের ব্যবহারও বেশ ফলপ্রসূ। হাঁপানির মাত্রা তীব্র হলে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। তবে নেবুলাইজার যথাযথভাবে জীবাণুমুক্ত রাখা জরুরি।

* হাঁপানির আক্রমণ ঠেকাতে অনেক সময় শিরায় স্টেরয়েডের ইনজেকশন দেওয়া হয়। শ্বাসকষ্ট মানেই হাঁপানি নয়। হৃদ্‌রোগ, রক্তশূন্যতা প্রভৃতি কারণেও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। হাঁপানি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়।

* পৃথিবীতে প্রায় ২৪ কোটি লোক হাঁপানিতে আক্রান্ত। এর মধ্যে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ প্রতিবছর হাঁপানির কারণে মারা যায়। হাঁপানিতে মারা যাওয়া মানুষের ৮০ শতাংশই তৃতীয় বিশ্বের অধিবাসী।