পৃথিবীতে থেকেও মঙ্গল গ্রহের মাটিতে বসবাস!
চারজন মানুষ বাস করছেন ‘মহাকাশের মঙ্গলগ্রহে! কোনও কল্পবিজ্ঞান গল্পের কথা হচ্ছে না। সত্যি সত্যিই মঙ্গল অভিযানে রয়েছেন তারা।একটা ‘কিন্তু’ রয়েছে। এই মঙ্গল পৃথিবীর মাটিতেই অবস্থিত। চাঁদে প্রথমবার পা রাখার পর কেটে গিয়েছে পাঁচ দশকেরও বেশি সময় । নতুন করে মানুষ চাঁদের মাটিতে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে নাসা। সেই সঙ্গেই মঙ্গলের মাটিতেও মানুষের পা পড়ুক, চাইছে মহাকাশ সংস্থা। এই সময় চারজন মানুষকে তৈরি করা হচ্ছে মঙ্গল অভিযানের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রের হাউস্টনের জনসন স্পেস সেন্টারে ১ হাজার ৭০০ বর্গফুটের ত্রিমাত্রিক ‘মঙ্গলগ্রহ’ তৈরি করা হয়েছে। মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসার উদ্যোগে।
আর সেখানেই ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার যাচ্ছে রস ব্রকওয়েল, মেডিক্যাল অফিসার নাথান জোন্স, সায়েন্স অফিসার আঙ্কা সেলারিউ দলের নেতা্রা কেলি হাস্টনের আপাতত দিন কাটাচ্ছে। মঙ্গলে সত্যি মানুষ পাঠাতে হলে কী প্রতিকূলতা ও সমস্যা তৈরি হতে পারে, সেগুলির সাথে মুখোমুখি হচ্ছেন তারা। কী কাজ করতে হচ্ছে তাদের? শস্য উৎপাদন, খাদ্য প্রস্তুত, তসারাই, ব্যায়াম, বিজ্ঞানের কাজ ঘুমের মতো নানা অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা চারজন। নাসা এমনটাই জানানো হয়েছে। ওড়াতে হচ্ছে হেলিকপ্টারের মতো ড্রোন রোবটও।চেষ্টা চলছে মঙ্গলে শারীরিক ও মানসিক প্রতিকূলতায় পড়তে হবে তার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার। পুরো বিষয় খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে যানান । এবছর মঙ্গলে অভিযান চালাবে নাসা। তবে ২০২৫ ও ২০২৬ সালেও হবে অভিযান। এখনই মানুষ পাঠানো হচ্ছে না। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতেই বিষয় নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। আগে হাতেকলমে নভোচরদের তৈরি করার কাজ শুরু করে নাসা। বিজ্ঞানের জগতে সবচেয়ে বড় প্রশ্নগুলোর একটি– এই মহাবিশ্ব কী দিয়ে তৈরি করা উত্তর খুঁজতে ইউরোপীয় একটি টেলিস্কোপ যুক্তরাষ্ট্রের থেকে মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে।এই মিশনের নাম ইউক্লিড দূরবর্তী কোটি গ্যালাক্সির ছবি তুলে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের একটি নিখুঁত ত্রিমাত্রিক ম্যাপ তৈরি করবে। বিজ্ঞানীরা এই ম্যাপের সাহায্যে কথিত ডার্ক ম্যাটার ও এনার্জি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া চেষ্টা করে। ধারণা করা হয়, মহাবিশ্বে আমরা যা দেখি সব কিছুর আকার ও বিস্তৃতিকে এই দুটো জিনিসই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গবেষকরা স্বীকার করে নিয়েছেন ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি সম্পর্কে এখনো তেমন কিছুই জানেন না। তবে এর কোনোটি সরাসরি চিহ্নিতও করা যায় না। তবে এই দুটো বিষয় সম্পর্কে জানতে ইউক্লিডের তৈরি থ্রিডি ম্যাপ ব্যবহার করা হবে বলে যানান।এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা বুঝর চেষ্টা করে যাচ্ছে ডার্ক এনার্জি ও ডার্ক ম্যাটার মহাবিশ্বের সময় এবং স্থানের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাজ্যে ল্যাঙ্কাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও অধ্যাপক ইসোবেল হুক বলেন, ‘জ্ঞানের এই অভাবের জন্য আমরা আমাদের উৎস সম্পর্কে আসলেই কোনো ব্যাখ্যা করতে পারি না। এই গবেষণা থেকে জানার চেষ্টা করে আমরা এই মহাবিশ্বের কোথায় অবস্থান করছি, এবং কিভাবে আজকের পর্যায়ে এসেছি এবং কিভাবে অপরূপ সব গ্যালাক্সি তৈরি হলো, কিভাবে তৈরি হলো সৌরজগত জন্ম হলো প্রাণের?ইউক্লিড টেলিস্কোপটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে ১৪০ কোটি ইউরো। স্পেস এক্সের ফ্যালকন-৯ রকেটে শনিবার কেপ ক্যানাভেরাল থেকে এটিকে মহাকাশে পাঠানো হয়েছে এবং টেলিস্কোপটি অবস্থান করবে প্রায় পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে। মহাকাশ গিয়ে পৌঁছাতে এর সময় লাগবে ১ মাসের মতো। বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন এর সাহায্যে ফিরে যাওয়া যাবে মহাবিশ্বের ১ হাজার বছর আগের ইতিহাসে। পৃথিবীর পাশাপাশি এটিও সূর্যের চারদিক দিয়ে একই গতিতে প্রদক্ষিণ করবে। প্রাথমিকভাবে এটি ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা প্রকল্প হলেও এই মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসারও অবদান রয়েছে, বিশেষ করে টেলিস্কোপের বিজ্ঞান ও প্রকৌশলগত বিষয়ে পরিচালিত গবেষণা থেকে ধারণা করা হয় মহাবিশ্বে যতো শক্তি আছে তার ৭০ শতাংশ ডার্ক এনার্জি বলে মনে করেন নাসা।
প্রায় ২৫ শতাংশ ডার্ক ম্যাটার এবং বাকি পাঁচ শতাংশ নক্ষত্র, তারকা, গ্যাস, ধুলোবালি এবং গ্রহ ও আমাদের মতো দৃশ্যমান বস্তু বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের রহস্যময় এই ৯৫ শতাংশ জগত সম্পর্কে ধারণা পেতেই ইউক্লিড টেলিস্কোপ প্রায় ছয় বছর ধরে এই দুটি গবেষণা পরিচালনা করবে। তার মধ্যে প্রধান কাজ হবে ডার্ক ম্যাটার কিভাবে কোথায় আছে এবং তার একটি মানচিত্র তৈরি করা। গ্যালাক্সিগুলো আকৃতি ধরে রাখতে পারতে না। এই শক্তি ‘স্ক্যাফল্ডিং’ হিসেবে কাজ করে। এটি অদৃশ্য আঠার মতো যা মহাবিশ্বকে একত্রিত করে ধরে রেখেছে ধারণা করা হয়। এখান থেকে আলো বিচ্ছুরিত হয় না আলো শুষেও নেয় না এখানে আলো প্রতিফলিতও হয় না।
এই বস্তুটি সরাসরি দেখা না গেলেও টেলিস্কোপের মাধ্যমে জানা সম্ভব এটা কোথায় ও কিভাবে আছে। বিজ্ঞানীরা বলন, দূরবর্তী নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে ছুটে আসা আলো বিশ্লেষণ করে ডার্ক ম্যাটার সম্পর্কে ধারণা করে পাওয়া যাবে বলে যানান। টেলিস্কোপও আকাশে মাত্র দুই বর্গ ডিগ্রি এলাকাজুড়ে সে প্রথমবারের মতো এই কাজটা করে আলোচিত হয়েছিল। বর্তমানে এখন ইউক্লিড টেলিস্কোপ এই কাজটা করবে আকাশের ১৫ হাজার স্কয়ার ডিগ্রি এলাকাজুড়ে। এই কাজটি এখন টেলিস্কোপের যে ভিআইএস ক্যামেরা দিয়ে করা হবে বলে যুক্তরাজ্যের নেতৃত্বে তৈরি করা হয়েছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মহাকাশ গবেষণা এবং ল্যাবরেটরির অধ্যাপক মার্ক ক্রপার বলেন এই ক্যামেরা দ্বারা যে ছবি তুলবে সেটা হবে বিশাল। এবং মাত্র একটি ছবি দেখতেই আপনার ৩০০টির বেশি টেলিভিশনের প্রয়োজন হবে।