হারিয়ে যাচ্ছে বক
প্রকৃতিতে সবুজ অপরূপ সুন্দরের প্রতীক ফসলের মাঠে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বকের লুকোচুরি যেন চিরন্তন বাংলার এক নয়নাভিরাম রূপ। শীত ছাড়াও নানান সময়ে হাওরবেষ্টিত জেলা মৌলভীবাজারের বিভিন্ন হাওর, বিল ও জলাশয়ের ধারে দলবেধে নামতো দেশি সাদা বক। এ যেন এক মিলনমেলা। একটা সময় ধানক্ষেত চাষ করার সময়ও শত শত বক উড়ে এসে লাঙ্গলের ফলার চার পাশে ঘিরে বসতো। চাষের সঙ্গে উঠে আসা মাটির নিচের পোকামাকড় খেয়ে ক্ষুধা মেটাতো। সারিসারি সাদা বক ছিল সব বয়সী মানুষের আনন্দের খোরাক।
কিন্তু, সব বর্ণনা ও সাহিত্যরস অলঙ্কার ফিকে হয়ে আসছে। বাঙালির কাব্যে প্রাণছোঁয়া জীববৈচিত্রের আদরমাখা এই দেশি পাখি এখন বিলুপ্তির মুখে। শুধু গ্রামগঞ্জে ফসলের জমিতে ও শহরের লেকগুলোতে শীতের মৌসুমে দেখা মিলে স্বল্পসংখ্যক বকের। জেলার কুলাউড়া উপজেলার হাকালুকি হাওর এলাকার বাসিন্দা মৎসজীবি সজীব আলী জানান, এই সাদা বক অনেক উপকারে আসে। ইরি ধানের চারা লাগনো জমিতে মাজরা পোকা, পামরি পোকা, কেচোঁ, ফড়িং, তুরকুলা পোকা দেখা যায়। যা ফসলের ক্ষতি করে। ক্ষেতে পানি দেওয়ার পর এই সব পোকা ভাসতে থাকে আর তা খেয়ে ফসলের উপকার করে বক। কিন্তু, এখন এই সাদা বক আগের মতো আর দেখা যায় না। পরিবেশ দূষণ, লোভী পাখি শিকারীদের ফাঁদে পড়ে সাদা বক প্রায় বিলুপ্তির পথে।
বাইক্কা বিল ও হাকালুকি হাওরে সাদা মেঘ আর ফসলের কাদাজলে সাদা বকের উপস্থিতির মনোমুগ্ধকর দৃশ্য মুগ্ধ করত পাখিপ্রেমীদের। ওদের দুরন্ত ওড়াওড়ি, কিচিরমিচির শব্দ সবমিলে বদলে যেত দৃশ্যপট। অপূর্ব পাখিদের ওই কোলাহল। এক সময় এই হাওরবেষ্টিত জেলা ছিল বকসহ নানান প্রজাতির পাখিদের অভয়াশ্রম। সাদা ও কানি বক প্রচুর দেখা যেত এ সময়। বিশেষ করে বিল, মজাপুকুর, ডোবায়, ফসলের মাঠে। সাধারনতঃ জলাধার ঘেঁষে বসবাস করে বক। গাছের মগডালে বাসা বেধে থাকে। এদের প্রধান খাদ্য মাছ ও পোকামাকড়। হারিয়ে যাচ্ছে দেশি বক ।
প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল মৌলভীবাজারের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী সারাবাংলাকে জানান, বক প্রকৃতির বন্ধু। আর বিশ্বে পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি খুব গুরুত্ব পাচ্ছে। বিষমুক্ত ফসল উৎপাদন, কিটনাশক ব্যবহার কমিয়ে আনতে পারলে মাছ ও পোকামাকড় খেয়ে বক বেঁচে থাকতে পারে। সুন্দর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র বাঁচিয়ে রাখার জন্যে আইপিএম পদ্ধতি ব্যবহারের বিকল্প নেই। এ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে শস্য উপকারী পাখি ফসলি জমি থেকে ক্ষতিকর পোকামাকড় নির্ভয়ে খেয়ে ফেলার সুযোগ পাবে। এতে করে মাটি তার পরিপূর্ণ পুষ্টি পাবে, ফসলও ভাল ফলবে। আর কৃষক হবে লাভবান অন্যদিকে রক্ষা হবে দেশি বকের এই অভয়ারণ্য।